Purchase!

রানীর নগরে ৯০ দিন

রোদেলা নীলার সাথে আমার প্রথম পরিচয় যত দূর মনে পড়ে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায়; জাতীয় জাদুঘরের অভ্যন্তরে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা কর্তৃপক্ষ আয়োজিত একটি অসাধারণ অনুষ্ঠানে। প্রতিবছর শিল্পসাহিত্যের অঙ্গনে সুপরিচিত সুপ্রতিষ্ঠিত কোনো লেখককে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে পাক্ষিক অনন্যা।
By রোদেলা নীলা
Category: বিবিধ
Paperback
Ebook
Buy from other retailers
About রানীর নগরে ৯০ দিন
রোদেলা নীলার সাথে আমার প্রথম পরিচয় যত দূর মনে পড়ে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায়; জাতীয় জাদুঘরের অভ্যন্তরে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা কর্তৃপক্ষ আয়োজিত একটি অসাধারণ অনুষ্ঠানে। প্রতিবছর শিল্পসাহিত্যের অঙ্গনে সুপরিচিত সুপ্রতিষ্ঠিত কোনো লেখককে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে পাক্ষিক অনন্যা। সেদিন সেই মহতী অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক জাহানারা নওশিনকে, যিনি কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের বড় বোন। অনুষ্ঠানের মঞ্চ আলোকিত করে বসে ছিলেন সংবর্ধনাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি আসাদ চৌধুরী প্রমুখ। ছিলেন অতি অবশ্যই অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। রোদেলা নীলা সে সময় অনন্যায় প্রতিবেদক ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। তার মাধ্যমে অনন্যার গোটা পরিবারের সাথে আমার সখ্য গড়ে ওঠে। ইংরেজি ভাষায় বলা যায় - From acquaintance to friendship.

সেদিন সেই অনুষ্ঠানে জানতে পারি রোদেলা নীলার পড়াশোনা গণিত শাস্ত্রে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমারও পড়াশোনা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যদিও ভিন্ন বিভাগে, গণিতের সাথে কোনোরকম সম্পর্ক নেই এমন একটি জ্ঞানকাণ্ডে। তফাত তার সাথে আমার আরও আছে; আমি বয়সে তার থেকে ঢের বড়, চুলে আমার পাক ধরেছে বটে। আর একটি বড় পার্থক্য আমাদের মাঝে; আমি স্বভাবতই ঘরমুখী, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় - দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু। অপরদিকে রোদেলা নীলা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আবারও বলি - আমি চঞ্চল হে আমি সুদূরের পিয়াসী।

সুদূরের পিয়াসী হবার সুবাদে তিনি গেল বছর আকাশপথে বেড়াতে গিয়েছিলেন অসাধারণ সুন্দর দেশ অস্ট্রেলিয়ায়; নিকটবর্তী আরও কয়েকটি দ্বীপদেশ নিয়ে যে মহাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, অস্ট্রেলিয়া শব্দটিকে আজ বহু অর্থ জ্ঞাপক একক শব্দ হিসেবে বিবেচনা করবো, নাকি অস্ট্রেলিয়া ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে হাইপারোনিমি (Hyperonymy) বা সুপার অর্ডিনেট (Super ordinate) হিসেবে বিবেচিত হবে।

রোদেলা নীলা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে ছিলেন গুনে গুনে তিন মাস অর্থাৎ মাত্র নব্বই দিন। সেই অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তার নাম রেখেছেন - রানীর নগরে ৯০ দিন। জানরা (Genre) হিসেবে এই রচনাকে ভ্রমণসাহিত্যের (Travel literature) অন্তভুর্ক্ত করা যায়। কারণ সমস্ত বর্ণনা জুড়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নানা জায়গা ভ্রমণের বিশ্বস্ত বিস্তারিত বিবরণ।


তিনি অস্ট্রেলিয়ার যে জায়গাতেই পা রেখেছেন সেই স্থানের মানুষ - প্রকৃতি—আবহাওয়া—সংস্কৃতি—ধর্ম—অর্থনীতি—উন্নয়ন—লোকাচার ইত্যাদি নানা বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করেছেন। তার এই রচনার পাণ্ডুলিপি পাঠের সময় আমি অনায়াসে আমার মানসচক্ষু দিয়ে সেই সব মনোরম স্থানকে কল্পনা করে নিতে পারি। মনে হতে থাকে লেখকের সাথে যেন সশরীরে আমিও ভ্রমণ করছি।

রোদেলা নীলার এই রচনার আর একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, রানীর নগরে ৯০ দিন কেবল একটি ভ্রমণবিষয়ক অনবদ্য রচনা নয়, এই রচনার কথক স্বয়ং লেখক নিজে অর্থাৎ এই রচনা একটি ফাস্টর্ পারসন ন্যারেটিভ (First person Narrative)। যে কথাটা এখন উল্লেখ করতে চাই, তা হলো ভ্রমণ সমগ্র রচনায় উপস্থাপিত ঘটনাগুলো ঘটেছে কয়েকজন ব্যক্তির/চরিত্রের জীবনে। সেই সমস্ত চলমান ঘটনার একটি সুনির্দিষ্ট প্রারম্ভ আছে এবং সুস্পষ্ট সমাপ্তি রয়েছে। এই সমস্ত ঘটনাকে আশ্রয় করে জীবন চলমান। আর লেখক, উপস্থাপিত সকল ঘটনার মাঝে মূল চরিত্র। এ যেন একটি স্বল্পায়তনের উপন্যাস ((Novelette).

এই নোভেলের প্রধান চরিত্র স্বয়ং লেখক (Protagonist)। লেখকের আপন অভিজ্ঞতা এমন এক হৃদয় হরণ ভাষাশৈলীর মাধ্যমে পাঠক সমীপে লেখক উন্মোচন করেন তার গহিন ভালোবাসা, ঘৃণা, বিশ্বাস, অনাস্থা, সংকোচের বিহ্বলতা আর কাস্তেসহ দ্রোহ।

এই সব নানান বর্ণের অনুভব ও ভাবনা অনন্যসাধারণ ভাষাশৈলীর উপস্থাপন।

রোদেলা নীলা একাধারে কবি—গল্প লেখক—প্রাবন্ধিক ও ভ্রমণ লেখক। রানীর নগরে ৯০ দিন তার চতুর্দশ গ্রন্থ, ইতোমধ্যে তার বেশ ক’টি গ্রন্থ পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রে—সাহিত্য পত্রিকা—ম্যাগাজিনে তার রচনা প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকেই আশ্রয় করে বেশ ক’টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে ইতোপূর্বে প্রকাশিত সবগুলো ভ্রমণ রচনার সাথে বর্তমান গ্রন্থের বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে। এ রচনা একই সাথে ভ্রমণ রচনা (Travelogue) এবং সচলায়তনের উপন্যাস (Novelette)।

শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবীতেই নারী ভ্রমণ লেখকের সংখ্যা বিরল, ভ্রমণ সাহিত্যের কথা উঠলেই হিউএন সাঙ, ইবনে বতুতা, মার্কো পোলোর কথা মনে পড়ে। কোনো দেশের কোনো অঞ্চলের কোনো নারী লেখকের কথা কেউ উল্লেখ করেন না। রোদেলা নীলা আর দশজন আটপৌরে বাঙালি নারীর অবগুণ্ঠনকে অমান্য করে ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ শেষে অর্জিত সকল সোনালি—রুপালি—তামাটে অভিজ্ঞতার কথা লিপিবদ্ধ করেন আপন আনন্দে স্বতঃস্ফূর্ত চিত্তে।

আজ রোদেলা নীলার এই গ্রন্থ প্রকাশের শুভক্ষণে বিশ্ববিখ্যাত প্রথম বাঙালি পর্যটক শ্রীহট্টের সন্তান রামনাথ বিশ্বাসকে স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়। রোদেলা নীলার লেখক সত্তাকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।

মহান একুশে বইমেলা ২০২৫
অধ্যাপক আহমেদ রেজা
ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
০১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।
Creative Dhaka
  • Copyright © 2025
  • Privacy Policy Terms of Use